বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের নাম ‘নতুন বল’। দুবাইয়ের স্লো উইকেটেও নতুন বল সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। সৌম্য সরকার-নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যর্থতায় শুরুতেই পথ হারায় বাংলাদেশ।
শতরানের আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কা পড়া দলকে ইতিহাসগড়া জুটিতে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিলেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলী অনিক। দুজনেই খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। যদিও জাকের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির সুযোগ মিস করেছেন, তবে হাতছাড়া করেননি হৃদয়।
দুবাইতে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে ভারতকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিলো শান্তর দল। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৪৯.৪ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান সংগ্রহ করেছে টাইগাররা।
জাকের ৬৮ আর হৃদয় ১০০ রান করে আউট হন। ভারতের পক্ষে ৫৩ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। এছাড়া ৩১ রান খরচায় হার্শিত রানা ৩ আর ৪৩ রান খরচায় ২ উইকেট নেন অক্ষর প্যাটেল।
এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দলের খাতায় ৩৫ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। শুরুর দুই ওভারে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দলকে চাপে ফেলেন সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংস শুরুর প্রথম ওভারে শামির বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। ৫ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। পরের ওভারে হার্শিত রানাকে মারতে গিয়ে শর্ট কাভারে কোহলিকে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। ২ বল খেলে তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি।
দলের খাতায় ২ রান যোগ হতে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরতে ক্রিজে নামেন সহ-অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু শামির করা সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে শুভমান গিলকে ক্যাচ দেন মিরাজ। ১০ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনি।
তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভরসা হয়ে ছিলেন ওপেনার তানজিদ তামিম। একপ্রান্ত আগলে রেখে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের রানের খাতা সচল রাখছিলেন তিনি। কিন্তু ভারতের স্পিন আক্রমণের শুরুটাই সামলাতে পারলেন না তিনি। অক্ষর প্যাটেলকে প্রথম বলে ডিফেন্স করার পরের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। ২৫ বলে ৪ চারের মারে ২৫ রানে থামেন তিনি। দলের খাতায় তখন ৩৫ রান, নেই ৪ উইকেট। ক্রিজে নেমে দলের হাল ধরবেন অভিজ্ঞ মুশফিক। কিন্তু প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড তিনিও। স্লিপে রোহিত শর্মা ক্যাচ না ছাড়লে জাকের আলীকে আউট করে হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করে নিতে পারতেন অক্ষর।
সে জীবন পেয়ে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন জাকের। হৃদয়ের সঙ্গে গড়েন ইতিহাস গড়া জুটি। ১১৪ বলে ৪ চারের মারে ৬৮ রান করে জাকের যখন আউট হন, ততক্ষণের তাদের জুটি দেড়শ পেরিয়ে পৌঁছায় ১৫৪ রানে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মোহালিতে ১৩১ রান করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাস্টিন কেম্প ও মার্ক বাউচার।
শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-ই নয়, জাকের ও হৃদয়ের এ জুটিতে ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষেও ষষ্ঠ উইকেটে যেকোনো দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৩ রানের জুটি ছিল শ্রীলঙ্কার আতাপাত্তু ও আর্নল্ডের। ২০০৫ সালে রেকর্ডটি গড়েছিলেন এ দুই সাবেক লঙ্কান ক্রিকেটার।
এদিকে জাকের সেঞ্চুরির সুযোগ মিস করলেও হাতছাড়া করেননি হৃদয়। যদিও শেষদিকে পা ক্র্যাম্প করায় তাকে বেশ ভুগতে হয়েছিল। ঠিকঠাক ক্রিজে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। ১১৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ১০০ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তাতে থামে বাংলাদেশের ইনিংসও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি হৃদয়ের প্রথম সেঞ্চুরি।
খুলনা গেজেট/এমএম